শ্যামনগর প্রতিনিধিঃ
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এম.আর.এ ক্লিনিকে ডাক্তার আনিছুর রহমানের ভুল অপারেশনে শিশু রাফিজার মৃত্যুর ঘটনায় থানার ভিতরে ৪ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মিমাংসার অভিযোগ উঠেছে। তবে মৃত্যু শিশুর স্বজনরা সাড়ে ৩ লক্ষ ও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাওলাদার সানওয়ার হোসেন মাসুমকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে ডাক্তার আনিছুর রহমান। গত মঙ্গলবার রাত ১১ টার দিকে থানার ভিতরে ওই টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি নির্ভর যোগ্য সুত্র। তবে ডাক্তার আনিছুর রহমান এই প্রতিবেদকের কাছে মোবাইল ফোনে জানান অপারেশন তিনি করেননি।এমনকি তার বিরুদ্ধে পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন অপারেশন কোন ডাক্তার করেছে সেটি আমার জানা নেই। টাকা লেনদেনের বিষয় ও অস্বীকার করেন তিনি। তবে এম.আর.এ ক্লিনিকের ম্যানেজার মোঃ ইব্রাহীম পরিক্ষা-নিরিক্ষা ছাড়া এপেন্ডিস অপারেশন করেছেন ডাঃ আনিছুর রহমান বলে স্বীকার করেন। এছাড়া তিনি আরো জানান গত সোমবার (৬জুন) শিশু রাফিজাকে নিয়ে তার স্বজনরা এম. আর.এ ক্লিনিকে আসেন। ওই দিন বেলা ৩ টায় কোন পরিক্ষা-নিরিক্ষা ছাড়া এপেন্ডিস অপারেশন করেন ডাঃ আনিছুর রহমান।
গরীব মানুষ এজন্য আগের পরিক্ষা দেখে অপারেশন করেছেন ডাক্তার। পরবর্তীতে তার অবস্থার অবনতি দেখে মঙ্গলবার সকালে তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি। এম.আর.এ হাসপাতালের পরিচালক সোলাইমান গাজীর মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মৃত রাফিজার মামাতো বোন পাখি জানান, এম.আর.এ ক্লিনিকে রাফিফাকে অপারেশন করেন ডাক্তার আনিছুর রহমান।
অপারেশনের পরে তার মামাতো বোনের মৃত্যু হয়েছে এটা তারা বুঝতে পারেনি। তার মামা ও পুলিশ কোন প্রকার টাকা লেনদেন করেননি। টাকা লেনদেনের বিষয় অস্বীকার করে শ্যামনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাওলাদার সানওয়ার হোসেন মাসুম জানান,মৃত শিশুর স্বজনরা থানায় লিখিত কোন অভিযোগ দিতে রাজি হয়নি। এজন্য মামলা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে টাকা লেনদেনের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি দাবি করেন। শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ ওয়াহিদ মূর্শেদ বলেন,মৃত রাফিজার স্বজনরা থানায় লিখিত কোন অভিযোগ দায়ের করেনি।
এজন্য কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া টাকা লেনদেনের বিষয় তিনি অবগতনন বলে জানান। শ্যামনগর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,রাফিজার মৃত্যু ঘটনার জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভুল অপারেশনে রাফিজার মৃত্যুর হয়েছে প্রমানিত হলে অভিযুক্ত ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন হুসাইন মোঃ সাফায়াত হোসেন জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে তিনি নিশ্চিত করেন। প্রসঙ্গত, এম.আর.এ ক্লিনিকে ডাঃ আনিছুর রহমানের ভুল অপারেশনে রাফিজা (৮) কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নের রাণীতলা গ্রামের হাফিজুর রহমানের মেয়ে। মৃত শিশুর পারিবারিক সুত্রে জানাযায়,এম.আর.এ ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ মো. আনিছুর রহমান সোমবার (০৬ জুন) বেলা ৩ টায় তাকে অপারেশন করেন। অপারেশন শেষে রাফিজার শারিরীক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
ওই দিন গভীর রাতে রাফিজার দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। মঙ্গলবার সকালে রোগীর স্বজনরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেন। এসময় তারা রাফিজাকে দ্রুত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। এরপর মঙ্গলবার (০৭ জুন) বেলা ১২ টার দিকে সাতক্ষীরামেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সেখানকার চিকিৎসকরা লিখিত পত্র দেন এই মর্মে, যে রাফিজা খাতুন সোমবার (৬ জুন) রাতেই মারা গিয়েছিল এবং অপারেশনের কারনে তার মৃত্যু হয়েছে সেটিও নিশ্চিত করেন ওই চিকিৎসক।