নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেরিতে মানুষের উপচে পড়া ভিড়
শুক্রবার (৬ মে) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাট ঘুরে দেখা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন।
শনিবার (৭ মে) যাদের অফিস খোলা রয়েছে, তাদের বেশির ভাগ মানুষ রওনা দিয়েছেন। সকাল ১০টার আগপর্যন্ত দৌলতদিয়ায় ভিড় দেখা না গেলেও বেলা ১১টা থেকে প্রচণ্ড ভিড় হতে থাকে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ দূরপাল্লার পরিবহন ছাড়াও মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারসহ মাহেন্দ্র, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে ঘাটে নামেন।তাঁদের কেউ কেউ ফেরিতে, আবার কেউ কেউ লঞ্চে করে নদী পাড়ি দিয়েছেন।
পাটুরিয়া ঘাটে দেখা যায়, দৌলতদিয়া থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরি বিপুলসংখ্যক মানুষ, কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি এবং অনেক মোটরসাইকেল বোঝাই করে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছাচ্ছে। মানুষ ফেরি বা লঞ্চ থেকে নামার পর দীর্ঘ পথ হেঁটে গাড়িতে যাচ্ছেন।
পাটুরিয়া ঘাটে নদী পাড়ি দিয়ে আসা যানবাহনের চাপ না থাকলেও কর্মস্থলমুখী মানুষের ভিড় সড়কজুড়ে। ঘাট থেকে প্রায় এক-দেড় কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে গাড়িতে উঠছেন তারা।
মাগুরা থেকে লঞ্চ পারাপারের একটি বাসে দৌলতদিয়া ঘাটে নামেন গাজীপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নজরুল ইসলাম। লঞ্চে নদী পাড়ি দিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে নামার পর বাইপাস সড়ক দিয়ে মাথায় ও হাতে ব্যাগ নিয়ে হাঁটছিলেন তিনি।
আলাপকালে বলেন, ‘ঘাটে চাপ পড়তে পারে, এই আশঙ্কায় লঞ্চ পারাপার বাসে এসেছি। লঞ্চে নদী পাড়ি দিয়ে পাটুরিয়া এসেছি। ঘাটে কোনো মাহেন্দ্র বা রিকশাজাতীয় যানবাহনকে পুলিশ ভিড়তে না দেওয়ায় মাথায় ও হাতে ব্যাগ নিয়ে হাঁটছি।’
পাটুরিয়া থেকে রো রো (বড়) ফেরি খানজাহান আলীতে দৌলতদিয়ায় পৌঁছানোর সময় ফেরির দ্বিতীয় মাস্টার মোহাম্মদ সামি বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে কিছুটা ভিড় ছিল। ঈদ শেষে ঢাকামুখী যাত্রীর যেমন ভিড় হওয়ার কথা, তেমনটা হয়নি। আজ সকাল থেকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। তবে অন্যান্য বছর যেভাবে মানুষ হুমড়ি খেয়ে ছুটতেন, এ বছর তেমনটি দেখা যাচ্ছে না।
এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক মন্দা ভাবের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন একটা ঈদের আনন্দ নেই। যে কারণে ঈদে বাড়িতে কম লোক গেছেন। এ ছাড়া সড়কপথের শৃঙ্খলা ঠিক থাকায় ঈদযাত্রা অনেকটাই সহজ হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
দৌলতদিয়ার ৫ ও ৭ নম্বর ঘাট ছাড়া অন্য কোনো ঘাটে ফেরি ভিড়তে না চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে মোহাম্মদ সামি বলেন, পাটুরিয়া থেকে সরাসরি এবং সহজ যোগাযোগ হিসেবে ৫ ও ৭ নম্বর ঘাট ব্যবহৃত হয়। ৩ বা ৪ নম্বর ঘাটে যেতে হলে আরও প্রায় এক কিলোমিটার পথ উজানে যেতে হয়। এতে সময় ও শ্রম লাগে বেশি। এ কারণে সাধারণত কেউ যেত চায় না।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ঘাটে ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি শাপলা শালুক ভেড়ামাত্র যাত্রীদের ঢল নামতে দেখা যায়। ফেরিটি থেকে যানবাহন আনলোডের পর দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া আর কোনো বড় গাড়ি উঠতে পারেনি। সহস্রাধিক যাত্রী এবং প্রায় অর্ধশত মোটরসাইকেল নিয়ে ফেরিটি ঘাট ছাড়ে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী ফারুকুল ইসলাম বলেন, আজ সকাল থেকে যানবাহনের সাথে সাথে যাত্রীদের চাপও বেড়েছে। বেলা ১১টা থেকে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। ফেরি ঘাটে ভেড়ামাত্র গাড়ি আনলোড হওয়ার আগেই যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে ফেরিতে উঠে পড়েছেন।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবদুস সাত্তার বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে বর্তমানে ২১টি ফেরি চলাচল করছে।